Technology

নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল?

নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল:  ধরা যাক, আমি আমার মুঠোফোনের ক্যামেরা দিয়ে আমার দাদার জন্মের পরের মুহূর্তের ছবি তুলছি।

দাদা তখন ১০ মিনিট বয়সী শিশু, তার মায়ের কোলে, কাঁথায় পেঁচানো। ছবিটি তুলছি আমি এবং তা তুলছি এখন। আমার দাদা শিশু, মানে, তখন আমার বাবার জন্ম হয়নি। নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল

আমারও জন্ম হয়নি। সেই মুহূর্তের ছবি তুলছি আমি, এখন, এই মুহূর্তে, আমার টেলিস্কোপ ক্যামেরা দিয়ে। কীভাবে সম্ভব?

নাসা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা ছবি প্রকাশ করেছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সেই ছবি অবমুক্ত করে বিশাল গর্বভরা ভাষণ দিয়েছেন।

নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল?
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ

নাসা বলছে, ছবিগুলো ৪৬০ কোটি বছর থেকে শুরু করে ১৩০০ কোটি বছরের বেশি আগের। ১৩৮০ কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের জন্ম, বিগব্যাংয়ের মাধ্যমে।

তখন কিন্তু এই পৃথিবী ছিল না, এই সৌরজগত ছিল না। পৃথিবীর বয়স ৪৫৪ কোটি বছর। অর্থাৎ পৃথিবীর জন্মের আগের ছবি তুলেছে পৃথিবী থেকে পাঠানো একটা টেলিস্কোপ।

আরও পড়ুন: নাসা কি ? নাসা কোথায় অবস্থিত এবং এর ইতিহাস

এটা কীভাবে সম্ভব? এই টেলিস্কোপ কি তাহলে টাইমমেশিনে চড়ে ১৩০০ কোটি বছর আগে চলে গিয়েছিল? ( নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল )

আসলে তা নয়। আলোর গতি আমরা জানি। সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো এসে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে আট মিনিট। তার মানে এখন যদি সূর্যের দিকে তাকাই, সাড়ে ৮ মিনিট আগের সূর্যকে দেখতে পাব। ( নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল )

আরও পড়ুন: বিশ্বের সেরা ৫টি প্রাকৃতিক বিস্ময়

আমরা যেসব নক্ষত্র দেখি, সেগুলো থেকে আলো আসতে মোটামুটি চার হাজার বছরের মতো সময় লাগে। এগুলো এত দূরে। তাহলে এখন যে নক্ষত্র দেখছি, তা প্রায় চার হাজার বছর আগের। যদি আরও দূরের নক্ষত্র টেলিস্কোপ দিয়ে দেখি, এমনও হতে পারে, সেই নক্ষত্র মরে গেছে। কিন্তু তার আলো এখন এসে আমাদের টেলিস্কোপে পড়ছে।

নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল?
নাসার তোলা ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি

নাসার নেতৃত্বে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ও কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির তৈরি করা জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ পৃথিবী থেকে বহুদূরে পাঠানো হয়েছে।

চাঁদ যত দূরে, তার চেয়ে চার গুণ দূরে আছে সেই টেলিস্কোপ। ভীষণ দামি। ১০ বিলিয়ন ডলার। মানে আমাদের তিনটা পদ্মাসেতুর সমান খরচ পড়েছে এই টেলিস্কোপ প্রকল্পে। সেই টেলিস্কোপে বহু দূরের গ্যালাক্সিপুঞ্জের ছবি ধরা পড়েছে। মনে করা হচ্ছে, তা ৪৬০ কোটি থেকে ১৩০০ কোটি বছরের বেশি আগের।

আর ছবিতে কী কী আছে?

নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল?

এটা আমরা শুনব বাংলাদেশের বিজ্ঞানী লামীয়া আশরাফের কাছ থেকে। পড়ে নেব প্রথম আলোয় ১৩ জুলাই ২০২২ প্রকাশিত এ–সংক্রান্ত খবরের একটা অংশ:

‍‌কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির হয়ে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর একটি দল কাজ করছে এই ছবি তোলা ও বিশ্লেষণে। সেই দলেরই সদস্য ঢাকার শান্তিনগরে বেড়ে ওঠা ও উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী লামীয়া আশরাফ মওলা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্যোতির্বিদ্যায় পিএইচডি করার পর লামীয়া বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর ডানলপ ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকসে পোস্টডক্টরাল ফেলো হিসেবে কাজ করছেন। ( নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল )

লামীয়া বলেন, এই ছবিতে যে উজ্জ্বল সাদা আলো, সেগুলো আমাদের ছায়াপথের তারা। আর দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোকে এখানে দেখা যাচ্ছে লাল/লালচে হিসেবে। সবচেয়ে কাছে যে গ্যালাক্সি, সেটি ৪৬০ কোটি আলোকবছর দূরের। আর দূরেরগুলো প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি আলোক বছর দূরের।

আরও পড়ুন: স্যাটেলাইট কি – স্যাটেলাইট এর কাজ, ব্যবহার, সুবিধা এবং অসুবিধা

তো এখন প্রশ্ন হলো, ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি এই নতুন টেলিস্কোপটি তুলতে পারল কীভাবে?

উত্তর হলো, ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এসব ছায়াপথের আলো এত দিন পর এই টেলিস্কোপে এসে ধরা পড়েছে। ছবিটা এখনকার, ঘটনা ১৩০০ কোটি বছর আগের।

তাহলে প্রশ্ন হলো, আমরা, আমাদের সৌরমণ্ডল, আমাদের ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েও তো মহাবিশ্বের একটা অংশ, নতুন প্রজন্ম। আমরা এত দূরে চলে এলাম কী করে?

নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল?

বিগব্যাংয়ের পরে শুরুতে মহাজগতের প্রসারণের বেগ অনেক বেশি ছিল। আলোর গতির চেয়ে বহু গুণ বেশি। তাই আমরা এত দূরে এসে পড়েছি। এরপর সেই গতি কমে এসেছে। ফলে ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথরাজির ছবি, মানে আলো এসে আমাদের টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে।

শুরুর প্রশ্নে আসি। ধরা যাক, আমার দাদা জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯২২ সালে। জন্মেছেন ১০০ আলোকবর্ষ দূরের আরেক গ্রহে। আমি সেখান থেকে এই পৃথিবীতে কোনোভাবে এসে পড়েছি টেলিপোর্টেশন বা এ রকম কোনো উপায়ে, অতি অল্প সময়ে (যদিও টেলিপোর্টেশন সম্ভব নয়। আসলে আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে বা আলোর সমান গতিতে চলাচল করাই সম্ভব নয়। তবু, গল্পের খাতিরে ধরে নিই) এবং তার ছবি আমি এখন এই পৃথিবীর কোনো টেলিস্কোপে তুলে ফেলতে পেরেছি। তাহলে আমি তাঁর জন্মমুহূর্তের ছবিই পাব। দাদার মায়ের কোলে দাদার শিশুবেলার ছবি আমি এখন তুলছি। অর্থাৎ তার শিশুকালের চেহারা থেকে বিচ্ছুরিত আলো এখন এসে পৌঁছাচ্ছে আমার ক্যামেরার লেন্সে। পাচ্ছি তাঁর তখনকার ছবি, যখন আমি জন্মই নিইনি। পৃথিবী থেকে পাঠানো একটা টেলিস্কোপ পৃথিবীর জন্মের বহু শত কোটি বছরের আগের ছবি তুলল, ব্যাপারটা অনেকটা এ রকমই নয় কি? ( নাসা কিভাবে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলল )

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: দুঃখিত!! কপি করা যাবে না, শেয়ার করুন।

Adblock Detected

Please Turn Off Your AdBlocker