Technology

Starlink কি? স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা Starlink সম্পর্কে বিস্তারিত

স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক সম্পর্কে বিস্তারিত

বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন, ইলন মাস্ক। ইলন মাস্ক এর কথা উঠলে তার ইলেক্ট্রিক কার কোম্পানি টেসলা ও তার স্পেস এক্সপ্লোরেশন ভেনচার, স্পেসএক্স এর কথা আসে। তবে তিনি যে স্টারলিংক (Starlink) নামে একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন, সেটি অনেকেই জানেন না। আবার স্টারলিঙ্ক এর নাম শুনলেও এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন না অনেকে।

প্রাইভেট স্যাটেলাইট এর একটি বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সম্পূর্ণ পৃথিবীতে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে স্টারলিংক। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিলিয়নার ইলন মাস্ক এর স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা স্টারলিঙ্ক সম্পর্কে বিস্তারিত।

স্টারলিংক কি?

স্টারলিংক হলো স্পেসএক্স এর একটি শাখা, যা অরবিট্যাল স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করে। একটি বৃহৎ স্যাটেলাইট ব্যবস্থার পাশাপাশি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদানে এই প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে।

২০১৫ সালে এই স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক এর কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালে এসে প্রথম প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইট অরবিটে লঞ্চ করা হয়। পরের বছরগুলোতে স্পেসএক্স সফলভাবে প্রায় ২,০০০ স্টারলিংক স্যাটেলাইট অরবিটে লঞ্চ করে।

২০১৫ সালে প্রথমবার স্টারলিঙ্ক এর কথা জানান ইলন মাস্ক। তিনি জানান, “এর (স্টারলিঙ্ক) ফোকাস হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী একটি গ্লোবাল কমিউনিউকেশন সিস্টেম তৈরী করা, যা অনেকটা স্পেসে ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর মত হতে যাচ্ছে। লক্ষ্য হলো যতদূর সম্ভব ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া।”

২০১৯ সালের জুন মাসে ইলন মাস্ক জানান যে দূরবর্তী ও কম ঘনত্বের এলাকাগুলোতে লো-লেটেন্সি, হাই-ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট অ্যাকসেস সেবা প্রদান করবে স্টারলিঙ্ক। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথেষ্ট স্পিডযুক্ত ব্যবস্থা নেই, তারাই হতে যাচ্ছেন স্টারলিংক এর গ্রাহক। ইতিমধ্যে স্পেসএক্স ১১,৯৪৩টি স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে লঞ্চ করেছে ও ৩০,০০০ এর বেশি স্যাটেলাইট লঞ্চের প্ল্যান করছে।

স্টারলিঙ্ক এর উদ্দেশ্য

স্টারলিংক এর উদ্দেশ্যে গ্রাহকের ঘরে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। হিউগসনেট বা ভিয়াস্যাট এর মত প্রতিষ্ঠানগুলোর মত স্টারলিঙ্ক ও স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট বিক্রি করতে চায়। স্টারলিঙ্ক এর মূল উদ্দেশ্য হলো গ্রাম অঞ্চলে ও হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নেই, এমন স্থানসমূহে ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটানো।

Starlink কি? স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা Starlink সম্পর্কে বিস্তারিত

পৃথিবীর যেসব স্থানে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়, এসব অঞ্চলে স্টারলিঙ্ক এর স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট বেশ উপকারে আসতে পারে। যেহেতু স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেটের জন্য ভূমিতে কোনো ধরণের ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরী করতে হয়না, তাই স্টারলিঙ্ক এর ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহেও।

স্টারলিঙ্ক এর কার্যক্রম

স্টারলিঙ্ক এর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বাড়িতে একটি ছোট স্যাটেলাইট ডিশ লাগাতে হবে, যা সিগনাল রিসিভ করে ও রাউটারে ব্যান্ডউইথ পাস করে। ছাদ, জানালা বা বাড়ির উঠোনসহ একাধিক ধরণের স্থানে এই রিসিভার বসানো যাবে। অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস এর জন্য স্টারলিঙ্ক এর একটি অ্যাপ রয়েছে যাতে অগমেন্টেড রিয়েলিটির সাহায্যে ঘরের কোন স্থানে সেরা ইন্টারনেট পাওয়া যাবে তা দেখা যায়।

বর্তমানে স্টারলিঙ্ক শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নির্দিষ্ট কিছু স্থানে সেবা প্রদান করছে। ইতিমধ্যে কাস্টমারের কাছে ১০০,০০০ এর অধিক স্যাটেলাইট টার্মিনাল পৌঁছে দিয়েছে স্টারলিঙ্ক, যা সময়ের সাথে সাথে কভারেজ ম্যাপ বৃদ্ধি করবে। স্টারলিংক এর আল্টিমেট লক্ষ্য হলো সম্পূর্ণ পৃথিবীতে ব্যবহারযোগ্য হাই-স্পিড ওয়াই-ফাই সিগনাল ইন্টারনেট প্রদান করা।

স্টারলিঙ্ক কিভাবে কাজ করে

ইলন মাস্ক এর ভাষ্যমতেঃ দেখতে পাতলা, ফ্ল্যাট ও ইউএফ এর মতো স্টারলিঙ্ক টার্মিনাল ইন-বিল্ট মোটর ব্যবহার করে নিজ থেকে সেরা এংগেলে নিজেকে সেট করে নিতে পারে। স্টারলিঙ্ক টার্মিনাল সেটাপ ইন্সট্রাকশনও বেশ সহজঃ সকেট প্লাগে লাগান ও আকাশের দিকে পয়েন্ট করুন। অর্থাৎ একজন ব্যবহারকারী খুব সহজে স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট সেটাপ করতে পারবেন।

Starlink কি? স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা Starlink সম্পর্কে বিস্তারিত

টার্মিনালে একটি ফ্ল্যাট আকৃতির অ্যারে এন্টেনা রয়েছে যা ১৯ইঞ্চি থেকে ৪৮সেমি আকৃতির হয়ে থাকে। এই এন্টেনাতে অনেকগুলো ছোটো এন্টেনা রয়েছে যেগুলো একত্র হয়ে সিগনাল আদান-প্রদানের কাজ করে। স্টারলিঙ্ক কিটে একটি ডিশ এন্টেনা (টার্মিনাল), পিওই (power over ethernet) সাপ্লাই, ট্রাইপড মাউন্ট ও দুইটি ইথারনেট ক্যাবল থাকে।

স্টারলিংক এর ইন্টারনেট স্পিড

স্টারলিংক এর ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্যমতে বেশিরভাগ স্থানে ৫০ থেকে ১৫০ মেগাবিটস পার সেকেন্ড ইন্টারনেট স্পিড পাওয়া যাবে ও লেটেন্সি ২০ থেকে ৪০মিলিসেকেন্ডের মধ্যে থাকবে। সময়ের সাথে সাথে নতুন গ্রাউন্ড স্টেশন ইন্সটল করা হবে, নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যার আপডেট করা হবে; যার ফলে ইন্টারনেট স্পিড, লেটেন্সি ও আপটাইমে উন্নতি দেখা যাবে।

বাস্তবিক পক্ষে Starlink এর ইন্টারনেট স্পিড নির্ভর করে সময় ও লোকেশনের উপর। গতবছর সিনেট (CNET) এর একজন কর্মচারী তার ক্যালিফোর্নিয়ার বাসায় স্টারলিঙ্ক এর ইন্টারনেট স্পিড পরীক্ষা করেন। গড়ে তিনি ৭৮মেগাবিটস পার সেকেন্ড ইন্টারনেট স্পিড পাচ্ছিলেন, যেখানে লেটেন্সি গড়ে ৩৬মিলিসেকেন্ডে অবস্থান করছিলো।

Starlink এর খরচ

বর্তমানে আবেদন করে স্টারলিংক এর ইন্টারনেট সংযোগ পাওযা যাবে। প্রথমে ৪৯৯ডলারের মাউন্টেবল স্যাটেলাইট ডিশ ও রাউটার কিনে তা ঘরে ইন্সটল করতে হবে। এরপর প্রতি মাসে ৯৯ডলার প্রদান করতে হবে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য। কোনো ধরণের টিয়ার (tier) ভিত্তিক প্ল্যান থাকছেনা স্টারলিঙ্ক এর ক্ষেত্রে, অর্থাৎ সকল ব্যবহারকারী একই ইন্টারনেট স্পিড পাবেন।

ইন্টারনেট সংযোগ এর জন্য উল্লেখিত ফিসমূহ অনেক বেশি। বিশেষ করে এই স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট এর স্পিড ফাইবার ইন্টারনেট স্পিড এর আশেপাশেও নেই। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চল বসবাসকারীদের জন্য এই ইন্টারনেট সেবা কার্যকরী বলে বিশ্বাস করেন ইলন মাস্ক।

স্যাটেলাইট বনাম ফাইবার ক্যাবল ইন্টারনেট

ভূমিস্থ অপটিক্যাল ফাইবার দ্বারা চালিত ফাইভার ইন্টারনেট এর গতি স্যাটেলাইট এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি। তাই যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এর কার্যকরিতা নিয়ে। তবে দামে বেশি হওয়া স্বত্বেও একটি সময়ে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যে ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ হতে চলেছে এটা নিয়ে অনেকেই আশাবাদী।

যেহেতু স্যাটেলাইট ইন্টারনেট এর ক্ষেত্রে বর্তমানে তেমন একটা প্রতিযোগিতা নেই, তাই স্টারলিঙ্ক অনেকটা খালি মাঠে গোল দিচ্ছে। আবার সম্প্রতি এফসিসি (FCC) এর একটি ফাইলে পাওয়া তথ্যের আলোকে ধারণা করা হচ্ছে স্টারলিঙ্ক তাদের স্যাটেলাইটসমূহ দ্বারা ফোন সার্ভিস প্রদান করতে পারে।

তবে যাই বলা হোক না কেনো, স্টারলিঙ্ক এর মাত্র 150Mbps ইন্টারনেট স্পিড যে ফাইবার ইন্টারনেটের গিগাবিট স্পিড এর তুলনায় অনেক পিছিয়ে সেটা মানতেই হবে। প্রতি ট্রান্সমিশনে বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় বলে স্পিডে হেরফের হতে দেখা যায়। তবে সময়ের সাথে সাথে স্পিড বাড়বে স্টারলিঙ্ক এর ইন্টারনেট স্পিডের, এই আশা রাখাই যায়।

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নিয়ে যত সমস্যা

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট একটি অসাধারণ প্রযুক্তি হলে প্র্যাকটিক্যাল ব্যবহারে বেশকিছু মেজর বাধার সম্মুখীন হতে হয় এই ইন্টারনেট ব্যবস্থার ক্ষেত্রে। একনজরে জেনে নেওয়া যাক চলুন স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা হিসেবে স্টারলিঙ্ক এর মুখ্য সমস্যাসমূহ সম্পর্কেঃ

  • আবহাওয়ার কারণে সিগনাল আসার পথ বিঘ্নিত হলে ইন্টারনেট কানেকশন স্পিড কমে যেতে পারে। ঝড়ো-হাওয়া বা বৃষ্টির কারণে নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • খারাপ লেটেন্সি বা হাই পিং রেট একটি বিশাল সমস্যা। লেটেন্সি ও পিং রেট বেড়ে যাওয়ার কারণে একাধিক ডিভাইসের মধ্যকার যোগাযোগে সমস্যা হয়।
  • ডাটা যেহেতু স্পেসে থাকা স্যাটেলাইটের সাথে আদানপ্রদান করতে হয় তাই গেমিংয়ের জন্য আদর্শ নয় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট।
  • ডিশ থেকে স্যাটেলাইটের .ছোটো কোনো বাধার কারণে ইন্টারনেটের কোয়ালিটিতে ড্রপ দেখা যেতে পারে।
  • ফাইবার কেবল ভিত্তিক ইন্টারনেট ব্যবস্থার চেয়ে স্যাটেলাইন ইন্টারনেট এর খরচ অনেকগুণ, তবে স্পিড সে তুলনায় অনেক কম।

স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা, Starlink সম্পর্কে আপনার মতামত কি? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: দুঃখিত!! কপি করা যাবে না, শেয়ার করুন।

Adblock Detected

Please Turn Off Your AdBlocker