আজকের আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা চাকরির সাথে ব্যবসা করাটা কতটা সম্ভব এবং চাকরির পাশাপাশি কি কি ব্যবসা করতে পারবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি। যদি আপনিও একজন চাকরিজীবী এবং চাইছেন চাকরির পাশাপাশি কিছু পার্ট-টাইম ব্যবসা করার কথা, তাহলে এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ুন।
বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনধারা এতটাই উন্নত যে কেবল চাকরি করে মাসের খরচ এবং ব্যক্তিগত চাহিদা গুলোকে পূরণ করাটা সম্ভব নয়।
তাই, আমাদের কাছে কিছু এক্সট্রা বা পার্ট-টাইম কাজ করা ছাড়া উপায় থাকেনা।
তবে, চাকরির সাথে ব্যবসা করাটা একটি অনেক দারুন জিনিস কেননা হতেপারে ভবিষ্যতে আপনার সেই পার্ট-টাইম ব্যবসা ফুল-টাইম ব্যবসাতে পরিণত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আপনার আর চাকরি করার প্রয়োজন আর হবেনা।
তাই চলুন, নিচে আমরা জেনেনেই চাকরি করতে করতে ব্যবসা করাটা কতটা সম্ভব এবং কি কি ব্যবসা আপনারা করতে পারবেন।
এখানে আমি আমার অভিজ্ঞতা হিসেবে আমার পরামর্শ আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।
চাকরির সাথে ব্যবসা করাটা কতটা সম্ভব ?
দেখুন বন্ধুরা, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করাটা বর্তমান সময়ে একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং প্রত্যেকেই চাইছেন নিজের ফুল-টাইম চাকরির পাশাপাশি একটি পার্ট-টাইম কাজ বা ব্যবসা করে কিছু অধিক অর্থ উপার্জন করা যাক।
তবে আজ এই মানসিকতা নিয়ে অনেকেই এগিয়ে বিভিন্ন ছোট ছোট ব্যবসা গুলো করছেন যেগুলোর মাধ্যমে ভালো উপার্জন করা সম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যদি আপনি সরাসরি আমাকে জিগেশ করে থাকেন যে চাকরি করে অন্যান্য পার্ট-টাইম কাজ বা ব্যবসা গুলো করা কি সম্ভব, তাহলে আমার উত্তর হবে “হে অবশই”.
আমি নিজেই বিগত ৫ বছর ধরে ফুল-টাইম চাকরি করছি এবং পাশাপাশি অনলাইন ব্লগিং ব্যবসা করে ভালো পরিমানের ইনকাম করে চলেছি।
তাই, এক্ষেত্রে আপনাকে এমন কাজ বা ব্যবসা গুলোকে খুঁজতে হবে যেগুলোর জন্য আপনাকে অধিক সময় দিতে হবেনা এবং প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় দিলেই যথেষ্ট।
চিন্তা করবেননা, এরকম প্রচুর কাজ বা ব্যবসা রয়েছে যেগুলোকে আপনি দপ্তর থেকে গিয়ে ২ থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যেই করতে পারবেন।
মনে রাখবেন, সারাদিন দপ্তরে কাজ করার পর আপনি এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে যাবেন এবং আবার ঘরে গিয়ে নিজের ব্যবসার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কিন্তু প্রচুর মনের জোরের প্রয়োজন।
পরিশ্রম এবং খাটনি প্রচুর হবে, তবে নিজের জীবন টিকে যদি অধিক সুবিধাজনক করতে চাইছেন, টাকা পয়সার অভাব ছাড়া জীবনে এগিয়ে যেতে চাইছেন, তাহলে আরাম ছেড়ে দুগুণ কাজ করতেই হবে।
যদি এখন আপনি নিজেকে তৈরি করে নিয়েছেন এবং ভেবে নিয়েছেন যে আপনিও চাকরির সাথে সাথে একটি ব্যবসা করবেন, তাহলে চলুন নিচে আমরা সেই প্রত্যেকটি লাভজনক ব্যবসা গুলোর বিষয়ে জেনেনেই যেগুলো চাকরির পাশাপাশি সহজেই করতে পারবেন।
চাকরির পাশাপাশি কি কি ব্যবসা করা যাবে ? (সেরা ৯ টি ব্যবসা)
দেখুন, ইন্টারনেট এর ব্যবহার এবং উপস্থিতির ফলে আজ বিভিন্ন ধরণের অনলাইন কাজ গুলো আমাদের সামনে রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে লোকেরা মাসে প্রচুর টাকা ইনকাম করছেন। বিশ্বজুড়ে এরকম প্রচুর লোকেরা রয়েছেন যারা ঘরে বসে কেবল ২ থেকে ৩ ঘন্টা কাজ করেই মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছেন।
তাই, যদি আপনি অনেক কম সময় দিয়ে কোনো টাকা ছাড়া পার্ট-টাইম ব্যবসা বা কাজ শুরু করার কথা ভাবছেন, তাহলে আমি পরামর্শ দিবো কিছু অনলাইন কাজ (part-time online business) শুরু করুন।
অনলাইন কাজে আপনার টাকা ইনভেস্ট করতে হয়না, ঘর থেকেই কাজ করতে পারবেন এবং ২ থেকে ৩ ঘন্টা প্রত্যেক দিন কাজ করলেই যথেষ্ট।
তবে, এরকম প্রচুর part-time offline business ideas গুলো রয়েছে যেগুলোর মাধমেও ভালো টাকা আয় করা সম্ভব এবং যেখানে আপনাকে বেশি সময় দিতে হবেনা, কেবল বিকেলের সময়ে কাজ করলেই যথেষ্ট।
চলুন জেনেনেই সেই প্রত্যেকটি পার্ট-টাইম ব্যবসা গুলোর বিষয়ে।
১. Blogging
আমি নিজেই একজন ব্লগার এবং বিগত ৫ বছর থেকে ব্লগিং করছি। এটা অবশই সত্যি যে কোনো টাকা ছাড়া অনেক কম সময় দিয়ে আপনি ব্লগিং করে প্রচুর টাকা প্রত্যেক মাসে আয় করতে পারবেন।
একটি জনপ্রিয় ব্লগ থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
আর বেশিরভাগ ব্লগাররা প্রায় ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘরে বসে আরামে ইনকাম করে নিচ্ছেন।
আপনি দপ্তর থেকে ঘরে ফিরে প্রায় ৩ ঘন্টা কাজ করলেই যথেষ্ট।
তবে এখন হয়তো আপনি ভাবছেন, আপনি তো ব্লগিং এর বিষয়ে কিছুই জানেননা, কিভাবে ব্লগ তৈরি করতে হয় ? একটি ব্লগ থেকে কিভাবে টাকা আয় করতে হয় ইত্যাদি।
চিন্তা করবেননা, সেই প্রত্যেক বিষয়েই আমরা আগেই বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে রেখেছি।
২. ইউটিউব চ্যানেল
যদি আপনি চাকরি করছেন এবং কোনো টাকা ছাড়া অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন, তাহলে একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে ভালো পরিমানের টাকা অনলাইনে উপার্জন করতে পারবেন।
আজ ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক লোকেরাও নিজের ইউটিউবের চ্যানেলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করছেন।
তবে আপনিও যদি কেবল কিছুটা সময় দিয়ে ভালো মানের টাকা অনলাইনে ইনকাম করতে চাইছেন, তাহলে নিজের একটি YouTube channel শুরু করুন।
আপনি যেটা জানেন বা যেই বিষয়ে আপনার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা রয়েছে সেই বিষয়ে নিয়মিত ভিডিও বানাতে হবে এবং নিজের চ্যানেলে আপলোড করতে হবে।
এভাবে নিয়মিত কাজ করতে থাকলে, কিছু দিনের মধ্যে আপনার চ্যানেলে প্রচুর subscribers এবং video views হতে শুরু হবে।
একবার আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪০০০ ঘন্টার ওয়াচটাইম সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আপনি আপনার ইউটিউবের চ্যানেল থেকে ইউটিউব মনিটাইজেশন এর জন্য apply করতে পারবেন।
Monetization enable হয়ে গেলে আপনার video গুলোতে গুগল এডসেন্স এর তরফ থেকে বিজ্ঞাপন দেখানো হবে এবং যার বিপরীতে আপনি প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
এমনিতে Google AdSense ছাড়াও নিজের YouTube চ্যানেল থেকে টাকা ইনকাম করার প্রচুর আলাদা আলাদা উপায় গুলো রয়েছে।
3. কনটেন্ট রাইটিং
বর্তমান সময়ে প্রচুর অনলাইন blogs, websites, social media pages গুলো রয়েছে যেগুলোতে নিয়মিত প্রচুর কনটেন্ট পাবলিশ করা হয়।
এবার, অনেক professional blogs গুলো রয়েছে যেগুলোতে আর্টিকেল লিখার জন্য বিভিন্ন কনটেন্ট রাইটার দের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
তাই, যদি আপনি নিজের ঘরে বসে কেবল নিজের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এর মাধ্যমে পার্ট-টাইম কাজ করে ভালো মানের টাকা আয় করতে চাইছেন, তাহলে অবশই কনটেন্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
তবে এক্ষেত্রে আপনার লেখালেখি নিয়ে অভিজ্ঞতা থাকাটা অনেকটাই জরুরি।
এই কাজ আরামে দপ্তর থেকে ঘরে এসে ২ থেকে ৩ ঘন্টার মধ্যে করে এক্সট্রা ইনকাম করা যাবে।
৪. চপ শিঙাড়ার দোকান
যদি আপনার কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট নিয়ে তেমন অভিজ্ঞতা নেই তাহলে চিন্তা করবেননা।
আজকাল বিকেলের সময়ে ভাজা-বড়া খাবার চাহিদা প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে।
আর ভালো করে দেখলে পাবেন, এই ধরণের দোকান গুলোতে প্রচুর ভিড় হয়ে থাকে।
তাই, আপনিও চাইলে ছোট একটি দোকান নিয়ে কেবল বিকেলের সময়ে চপ, পকোড়া, মোমো, চা ইত্যাদির দোকান দিতে পারবেন।
মনে রাখবেন, এই কাজের জন্য আপনাকে শুরুতে কিছু টাকা ইনভেস্ট অবশই করতে হবে।
এই ব্যবসার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনার দোকানের জায়গা এবং খাবারের সুস্বাদু হওয়াটা।
আপনি চাইলে একজন কারিগর রেখেও খাবার বানানোর কাজ করিয়ে নিতে পারবেন।
৫. মোবাইল রিপেয়ারিং ব্যবসা
আপনি যদি মোবাইল রিপেয়ারিং এর কাজ জানেন তাহলে এই কাজ থেকেও প্রচুর টাকা আয় করতে পারবেন।
তবে আপনি ঘর থেকে বা একটি ছোট দোকান নিয়ে দপ্তরের থেকে ফেরার পর এই কাজ করতে পারবেন।
এতে, আপনার সময় সুন্দর ভাবে কেটে যাবে এবং কিছুটা extra income হয়ে যাবে।
আজ প্রত্যেকের কাছেই একটি smartphone অবশই রয়েছে, এবং তাদের মোবাইল গুলো এক না এক সময় খারাপ অবশই হয়ে থাকে।
তাই, নিজের কাজের প্রচার ভালো করে করতে পারলে প্রচুর কাজ নিয়মিত পেতেই থাকবেন।
৬. Online course selling
বর্তমান সময়ে যেকোনো বিষয়ে শেখার জন্য বা কোনো কোর্স করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ লোকেরাই অনলাইনে সেই কোর্স করতে পছন্দ করে থাকেন।
কারণ, অনলাইনে কোর্স করা মানে কম খরচে ঘরে বসে বসে শিক্ষা গ্রহণ করা।
তাই, আপনিও যদি কোনো বিষয়ে ভালো জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা রেখে থাকেন, তাহলে অবশই সেই জ্ঞান অনলাইন কোর্স হিসেবে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন।
আপনি চাকরির পাশাপাশি এই কাজ করতে পারবেন এবং ভিডিও কোর্স তৈরি করার জন্য বিকেলের ২ থেকে ৩ ঘন্টার সময় যথেষ্ট।
৭. Affiliate marketing business
এফিলিয়েট মার্কেটিং হলো অনলাইনে ঘরে বসে টাকা আয় করার বর্তমানের সব থেকে লাভজনক উপায়।
এখানে আপনাকে অন্যান্য বিভিন্ন e-commerce website বা company গুলোর পণ্য গুলোকে নিজের blog, website বা YouTube channel এর মাধ্যমে প্রচার করিয়ে বিক্রি করতে হয়।
এবং বিক্রি করা প্রত্যেক পণ্যের বিপরীতে আপনাকে কিছু টাকা কোম্পানির তরফ থেকে দেওয়া হয়।
Affiliate marketing এর মাধ্যমে লোকেরা ঘরে বসে কেবল একটি computer বা laptop এর মাধ্যমে প্রচুর টাকা অনলাইনে ইনকাম করছেন।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, যদি আপনিও চাকরির সাথে ব্যবসা করার কথা ভাবছেন, তাহলে ওপরে দেওয়া ব্যবসা গুলোর বিষয়ে অবশই ভাবুন।
ওপরে বলা প্রত্যেকটি ব্যবসার আপনারা অনেক সহজে কিছু তবে কেবল কিছু সময়ের জন্য করে ভালো মুনাফা আয় করতে পারবেন।
যদি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানাবেন।