QR code কি ? জেনেনিন কিউআর কোড এর ব্যবহার এবং সুবিধা
QR code কি ? (QR code meaning in Bengali), আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
আজকালকার ক্রেতারা সকলেই কমবেশি QR code কথাটির সাথে পরিচিত।
আসলে, আমরা কোনো পণ্য বা জিনিসের গায়ে চৌকো আকৃতির, বিন্দু দিয়ে তৈরী বর্গক্ষেত্রের ছবি প্রায় প্রত্যেকেই লক্ষ্য করেছি।
আর সেই বর্গক্ষেত্রের ছবিটি হলো “কিউআর কোড“. আজকে আমাদের আলোচলার বিষয়ই হল কিউআর কোড।
এই আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে চলেছেন, কিউআর কোড কি ও এর অর্থ ও ব্যবহার সম্পর্কে।
আসুন, প্রথমত আমরা জানি, এই কিউআর কোড বলতে কি বুঝায় ?
QR code কি (What is QR code in Bengali) ?
QR code হল ইংরেজি শব্দ কুইক রেসপন্স কোডের (quick response code) সংক্ষিপ্ত নাম।
বাংলাতে যার মানে দাঁড়ায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া কোড।
যার মানে, যে কোডগুলো চোখের নিমেষে আপনার প্রাপ্য তথ্য প্রদান করতে সক্ষম, সেগুলোই হল এই QR কোড।
মূলত, কিউআর কোডকে আমরা বহুল ব্যবহৃত বারকোডের উন্নত সংস্করণ হিসেবে বলতে পারি।
এই ধরণের দ্বিমাত্রিক বা 2D ম্যাট্রিক্স বারকোড আমরা বিভিন্ন জায়গাতেই দেখে থাকি।
তা সে বৈদ্যুতিক বিল, সফ্ট ড্রিংকসের বোতল, কিংবা খবরের কাগজ ও আরও নানা জায়গাতে QR code-কে নানাধরণের কাজে ব্যবহার করা হয়।
QR code গুলো হলো এক ধরণের machine-readable code, মানে মেশিনের দ্বারা এই কোড গুলোকে পড়া সম্ভব এবং সেগুলোতে থাকা তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
কিউ আর কোড গুলো মূলত matrix barcode এর প্রকার যেগুলোকে 1994 সালে Japanese automotive company “Denso Wave” দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল।
QR code গুলোর কাজ কি ?
এই বিন্দুসমষ্টি দিয়ে তৈরী মূলত কালো রঙের বর্গক্ষেত্র গুলোতে লুকোনো থাকে কোনো ফোন নম্বর, একক নম্বর (unique number), কোনো ওয়েবসাইটের ইউআরএল ও নানাধরণের তথ্য।
তবে, আমরা সরাসরি সেইসব তথ্য চোখে দেখতেও পাই না বা পড়তেও পারি না।
QR কোড–এ লুকোনো তথ্য পড়তে গেলে আমাদের কোনো স্ক্যানার মেশিনের সাহায্য নিতে হয়।
সোজা কথায় বলতে গেলে, QR code হল একধরণের মেশিন–দ্বারা পাঠযোগ্য ছবি।
যেই ছবিগুলোতে কোনো তথ্য এমনভাবে দেওয়া থাকে, যা খালি চোখে পড়া সম্ভব নয়।
কেবলমাত্র কোনো স্ক্যানার বা মেশিন ব্যবহার করে তবেই আমরা মানুষ তা পড়তে পারে এরকম ভাষায় ওই তথ্যগুলোকে রূপান্তরিত করতে পারি।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মূলত ই–কমার্সের সাপ্লাই চেনগুলো QR কোডগুলি ব্যবহার করে পণ্য সম্পর্কিত তথ্য ট্র্যাক করে থাকে।
এখনকার দিনে প্রায় সমস্ত স্মার্টফোনেই বিল্ট–ইন কিউআর কোড রিডার রয়েছে।
যাতে খুব সহজেই ক্রেতারা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলোর QR code-এর মাধ্যমে পাঠানো তথ্যগুলো বিনা বাধাতেই পেয়ে যান।
সত্যি বলতে, কিউআর কোডগুলো হল মেশিনের পাঠযোগ্য ভাষা।
এই ভাষাগুলো বা তথ্যগুলো মেশিনের ভাষায় যেমন, নিউমেরিক, আলফানউইমেরিক, বাইনারি বা কাঞ্জি (একধরণের বিশেষ চাইনিজ ভাষা, যা জাপানি লিখন পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয়) ভাষাগুলোয় হয়ে থাকে।
মূলত, কোডগুলো এই ভাষাগুলোর ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে।
আর আমরা যখন এই কোডগুলো মেশিনের মাধ্যমে স্ক্যান করি, তখন এই ভাষাগুলো থেকেই আমরা আমাদের বোধগম্য ভাষায় তথ্য পেয়ে যেতে পারি।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,
এখনকার অনেক রেস্তোরাঁতেই QR code স্ক্যান করেই সম্পূর্ণ খাবারের মেনুকার্ড আমরা দেখতে পাচ্ছি।
অর্থাৎ, এখানেও কিউআর কোডিং ব্যবহার করে তবেই আমরা আমাদের বোধগম্য ভাষায় মেনুকার্ডটা পড়তে পারছি কোনো একটি ডিভাইস বা মেশিন এর মাধ্যমে।
কিউআর কোডের ইতিহাস:
১৯৯৪ সালে সর্বপ্রথম এই QR code-এর নকশা পৃথিবীর সামনে নিয়ে আসে ডেনসো ওয়েব নামক একটি বিখ্যাত জাপানি মোটরগাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা।
প্রথমদিকে এই কোডগুলো শুধুমাত্র অটোমোটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত হলেও পরে সারা বিশ্বে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতেই ব্যবহৃত হতে থাকে।
এই কোডগুলোর তথ্য সঞ্চয়ের ক্ষমতা অনেক বেশি ও স্ক্যানের মাধ্যমে সেগুলোকে সহজেই পাঠ করা যায়।
মেশিনদের দ্বারা QR কোড তৈরী করা ও তথ্য পাওয়াও আজকাল অনেক বেশি সহজ হয়ে গেছে।
এইসব কারণের জন্যেই বারকোডের এই উন্নততর সংস্করণের চাহিদা অনেকটাই বেশি এই স্মার্টফোনের যুগে।
QR Code-এর প্রকারান্তর:
ব্যবহারের ধরণ অনুযায়ী এই কোড প্রধানত দুই রকমের হয়ে থাকে।
এই ধরণগুলো হল –
১. স্ট্যাটিক কিউআর কোড
২. ডাইনামিক কিউআর কোড
চলুন এই দুটো আলাদা আলাদা প্রকারের কিউআর কোড গুলোর বিষয়ে জেনেনেই।
১. স্ট্যাটিক কিউআর কোড
স্ট্যাটিক QR কোড গুলোতে থাকা তথ্যগুলো একবার তৈরী হলে সেগুলো আর পরিবর্তন করা যায় না।
এই ধরণের কোডের সবথেকে ভালো উদাহরণ হল একবারের (one-time) জন্যে তৈরী করা মার্কেটিং ক্যাম্পেইন বা PR ইভেন্টের জন্যে তৈরী QR কোড।
এই কোডগুলো কেবলমাত্র লিমিটেড সময়ের জন্যেই ব্যবহার করা হয়।
২. ডাইনামিক কিউআর কোড
ডায়নামিক QR কোড গুলোয় তথ্য পরিবর্তন খুব সহজেই করা যায়।
মূলত, এইধরণের কোড গুলোতে কোনো না কোনো ওয়েবসাইটের ইউআরএল (URL) দেওয়া থাকে।
যাতে আপনি কোডগুলো স্ক্যান করলেই কোনো ওয়েবসাইটে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন।
আর, এই ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো পরিবর্তিত হলে, আপনি স্ক্যান করার সাথে সাথেই যা তথ্য আপডেট করা হবে, তা সঙ্গে সঙ্গেই পেয়ে যাবেন।
এই ডায়নামিক কোডের সবথেকে মজার ব্যাপার হল এই কোডগুলো আপডেট করতে নতুন কোনো কোড তৈরির প্রয়োজন হয় না।
আসুন এবার আমরা জানি, QR কোড কিভাবে কাজ করে?
QR কোড কিভাবে কাজ করে ?
ধরুন, আপনার নিজের স্মল বিসনেস রয়েছে। এইবার আপনি করোনার বাজারে, আপনার পণ্যের মূল্য পরিবর্তন করতে চান এবং খুব সহজে আপনার ক্রেতাদের সে ব্যাপারে কোনো দ্বিধা–দ্বন্দ্ব ছাড়াই সঠিক তথ্যগুলো জানিয়ে দিতে চান।
সেক্ষেত্রে আপনি সহজেই আপনার কোম্পানির জন্যে একটি কিউআর কোড তৈরী করতে পারেন।
এইবার, যেই আপনি পরবর্তীতে আপনার পণ্যের দাম পরিবর্তন করতে চাইবেন কিংবা নতুন পণ্য সংযুক্ত করতে চাইবেন, খুব সহজেই ওই QR code-এর মধ্যে তথ্যগুলো পরিবর্তন করতে পারবেন।
এতে আপনার ক্রেতারা কখনওই পণ্য দেখতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।
QR code-এর সুবিধা:
চলুন, এবার আমরা কিউআর কোড এর কিছু লাভ এবং সুবিধা গুলোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেই।
১. বৃহত্তর স্টোরেজ ব্যবস্থা:
একটি সাধারণ বারকোডের থেকে বহুগুণ বেশি তথ্য একটি QR কোডে জমা করা যায়।
যদি বারকোডে ১০ থেকে ১২টি সংখ্যা স্টোর করা যায়, তবে কিউআর কোড এর মধ্যে প্রায় ২০০০টি ক্যারেক্টার বা সংখ্যা স্টোর করার ক্ষমতা রাখে।
বারকোডের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১২টি সংখ্যার ভিত্তিতে ওয়েবসাইট পরিদর্শন বা পণ্যের সম্পূর্ণ বর্ণনা অনেকক্ষেত্রেই অসম্ভব।
কিন্তু, এই ২০০০টি সংখ্যায় QR কোডে অনেক বেশি তথ্য মজুত করা করা যায়।
২. তথ্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম:
QR কোডের তথ্য গুলোকে কোনোদিন মুছে ফেলা বা নষ্ট করে ফেলা যায় না।
যদিও বা কোনোভাবে এই কোডগুলোর কোনো অংশের যদি কোনোরকম ক্ষতি হয়, তাহলেও ওই কোড থেকে আপনি তথ্য সহজেই পেয়ে যাবেন।
৩. তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধা:
QR কোড গুলো সাধারণ মেসেজের মাধ্যমে খুব সহজেই আদান প্রদান করা সম্ভব।
এর জন্যে আপনার আলাদা করে কোনো এপ্লিকেশন ব্যবহার করার দরকার পড়ে না।
৪. তথ্যের সুরক্ষা:
বারকোডের মতো QR কোডেও তথ্যের নিরাপত্তা অনেকটাই বেশি।
এই কোডগুলো মানুষ কখনওই সাধারণভাবে দেখে বা পড়ে মানে বুঝতে পারে না।
ডাটাগুলো ইনস্ক্রিপ্টেড বা মেশিনারি ভাষায় থাকে বলে, তথ্যের সুরক্ষা কোনোভাবেই নষ্ট হয় না।
কিউআর কোডের ব্যবহার:
এই কোডগুলোর ব্যবহার নানা কার্যক্ষেত্রে ও নানা কারণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল –
১. সহজ লিংক প্রদান:
বর্তমান প্রযুক্তি–নির্ভর যুগে লিংক আদান–প্রদান করতে গেলে QR কোড যথেষ্ট বিশ্বস্ত একটি পদ্ধতি।
এতে খুব সহজেই ও নিরাপত্তার সাথে একে অপরের সাথে লিংক শেয়ার করা সম্ভব।
২. তথ্য সহজেই পাঠানো যায়:
এই কোডগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই মোবাইল নম্বর, টেক্সট কিংবা ইউআরএল দেওয়া নেওয়া করা যায়।
৩. বিজ্ঞাপন:
ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবসার প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে QR কোডের মতো বিশ্বস্ত ও নিরাপদ মাধ্যম আর নেই।
এই কোডের সাহায্যে মানুষের মধ্যে ব্যবসার স্বচ্ছতা সহজেই বজায় রাখা যায়।
QR কোড প্রতিটি কোম্পানির ক্ষেত্রে অনন্য বা ইউনিক হয়।
তাই, জালিয়াতি হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম থাকে।
৪. পরিষেবা বা পণ্যের তথ্য সম্পর্কে জানানো:
অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা পরিষেবার তথ্য কিউআর কোডের সাহায্যে মানুষের কাছে তুলে ধরে।
এতে তারা পণ্য বা পরিষেবার সম্পর্কে তথ্য স্বচ্ছতার সাথে জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারে।
এর ফলে ক্রেতারা পণ্য বা পরিষেবা গ্রহণের সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৫. পণ্যের মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা:
অনেক পণ্যসামগ্রীর গায়ে কিউআর কোড ছাপানো থাকে। যা স্ক্যান করে আপনি প্রডাক্টির আসল মূল্য সম্পর্কে সহজেই জানতে পেরে যান।
তাই QR code ক্রেতাদের অসাধু ব্যবসায়ীদের অসৎ উদ্দেশ্য থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
নানা ধরণের ওয়েবসাইট থেকে আপনি আপনার নিজের যেকোনো প্রয়োজনে QR কোড তৈরি ও শেয়ার করতে পারেন।
আর এই কোডগুলো স্ক্যান করার জন্যে আপনার স্মার্টফোনই যথেষ্ট।
আমাদের শেষ কথা,,
আমাদের QR Code নিয়ে আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল। লেখাটি আপনাদের কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।
QR code কি (QR code meaning in Bengali) নিয়ে লিখা আমাদের আজকের আর্টিকেল যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।
A comment