এন্ড্রয়েডে ভার্চুয়াল র্যাম কি ও কিভাবে কাজ করে
ভার্চুয়াল র্যাম, ডায়নামিক র্যাম এক্সপেনশন, এক্সটেনডেড র্যাম – সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া স্মার্টফোনগুলোর খবর রাখলে এসব শব্দ হয়তো শুনে থাকবেন। প্রতিটি স্মার্টফোনে র্যাম থাকে, যা সবার জানা। তবে ফোনের ভার্চুয়াল র্যাম বা “এক্সটেনটেড র্যাম” অনেকটা নতুন একটি ধারণা।
বর্তমানে শুধুমাত্র অল্প কিছু ডিভাইসে এই ফিচারটি দেখা গেলেও ভবিষ্যতে প্রচুর স্মার্টফোনে এই ফিচারের দেখা মিলতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভার্চুয়াল র্যাম কি ও কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
ভার্চুয়াল র্যাম কি?
ভার্চুয়াল র্যাম এর ধারণা বুঝতে হলে আগে বুঝতে হবে র্যাম কি। স্মার্টফোনে র্যাম হলো একটি অস্থায়ী মেমোরি যা অন্যসব ধরনের স্টোরেজ টাইপ থেকে অনেক দ্রুত। স্মার্টফোনে যখন কোনো অ্যাপ ওপেন করা হয়, তখন এটিকে প্রসেস বলে।
আর এই প্রসেসসমূহ জমা থাকে ফিজিক্যাল মেমোরি, অর্থাৎ র্যামের মধ্যে। ল্যাগ (Lag) ও ডিলে (Delay) ছাড়া অ্যাপসমূহ লোড করার কাজ সম্ভব হয় র্যাম দ্বারা।
অন্যদিকে ভার্চুয়াল র্যামও স্টোরেজ ব্যবহার করে, তবে এটি সরাসরি র্যামের বদলে ফোনের স্টোরেজ ব্যবহার করে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ফোনের নির্দিষ্ট পরিমাণ ইন্টারনাল স্টোরেজকে র্যাম হিসেবে ব্যবহার করে র্যামের কার্যকরীতা বাড়ানোর জন্য ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহৃত হয়।
নামের মধ্যে “ভার্চুয়াল” শব্দ দেখে বুঝতে পারছেন যে এটি মূল র্যামের কোনো অংশ নয়, বরং ইন্টারনাল স্টোরেজের একটি অংশ মাত্র।
যেমনঃ একটি ফোনে যদি ৬জিবি র্যাম ও ১২৮জিবি স্টোরেজ থাকে ও ৩জিবি ভার্চুয়াল র্যাম থাকে, তবে উক্ত ফোনে র্যাম হবে মোট ৯জিবি ও ইন্টারনাল স্টোরেজ ব্যবহার করা যাবে ১২৫জিবি।
ভার্চুয়াল র্যাম কিভাবে কাজ করে?
যারা লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের সাথে পরিচিত তারা ইতোমধ্যে এটি জেনে থাকবেন যে ভার্চুয়াল র্যামের ফিচারটি কম্পিউটার থেকে স্মার্টফোনে এসেছে। এই ফিচারটি অনেক বছর ধরেই কম্পিউটারে রয়েছে।
রুট ব্যবহার করে এতোদিন স্মার্টফোনে এই ফিচারটি ব্যবহার করতে হলেও বর্তমানে অফিসিয়াল ভার্চুয়াল র্যামের কল্যাণে এই ফিচারটি দিন দিন সহজলভ্য হচ্ছে। মূলত ডিভাইসের উপর ভার্চুয়াল র্যামের পরিমাণ নির্ভর করে।
ইতিমধ্যে ১জিবি থেকে ৭জিবি পর্যন্ত এক্সটেনডেটেড র্যামযুক্ত ফোন বাজারে এসেছে।
ভার্চুয়াল মেমোরি ফিচার চালু করার পর যে পরিমাণ ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করবেন, সে পরিমাণ স্টোরেজ ফোনের স্টোরেজ থেকে ব্যবহৃত হবে। তবে ফিচার চালু হওয়ার পর ফোন রিস্টার্ট করা অত্যাবশ্যক।
যেমনঃ রিয়েলমি নারজো ৩০ ৫জি ফোনটিতে ৬জিবি র্যাম রয়েছে, যেখানে ৫জিবি ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করলে মোট র্যাম হবে ১১জিবি।
এবার জানি চলুন বাস্তব জীবনে এই ভার্চুয়াল র্যাম ফিচারের প্রয়োগ সম্পর্কে। প্রথমত, ভার্চুয়াল র্যাম বাড়ানোর মাধ্যমে সিস্টেম দ্বারা ব্যবহৃত র্যামের পরিমাণ বাড়বে না, বরং ফোনের স্টোরেজ ব্যবহার হবে ভার্চুয়াল র্যাম হিসেবে।
একই ভাবে ফোনের স্টোরেজ থেকে উক্ত পরিমাণ স্টোরেজ কমে যাবে, কিন্তু ফিজিক্যাল র্যাম একই থাকবে।
ভার্চুয়াল র্যাম এর ব্যবহারের উদাহরণ
ভার্চুয়াল র্যাম কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে একটি উদাহরণ দেখা যাক। ধরুন আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ১০টি অ্যাপ চালু আছে ও আপনার ফোনের মূল র্যামে কোনো স্পেস খালি নেই।
এই অবস্থায় ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা অ্যাপ ও ডায়নামিক টাস্কসমূহের মধ্যে সবার আগে চালু করা এক বা একাধিক অ্যাপ ক্লোজ হয়ে যায়। এই সমস্যায় আমরা কমবেশি সবাই পড়েছি।
এরকম সমস্যার আদর্শ সমাধান হলো ভার্চুয়াল র্যাম। যেসব অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো ডায়নামিক ফাংশন নেই, সেসব অ্যাপকে ব্যাকগ্রাউন্ডে দীর্ঘসময় জুড়ে ধরে রাখতে ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহৃত হয়।
যেসব অ্যাপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেসব অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম নিজ থেকে র্যামে রাখবে ও বাকি অ্যাপসমূহ ভার্চুয়াল র্যামে সংরক্ষিত থাকবে।
ক্যালকুলেটর এর মত অ্যাপ যেগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো ডায়নামিক টাস্ক নেই, সেসব অ্যাপ ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করে ব্যাকগ্রাউন্ডে দীর্ঘ সময় ধরে একটিভ থাকতে পারে।
সাধারণ র্যামের চেয়ে ভার্চুয়াল র্যাম অর্থাৎ ফোনের স্টোরেজ অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী হয়ে থাকে। তাই গেম বা পেমেন্ট অ্যাপসমূহ ভার্চুয়াল র্যামে সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। এই কারণে হেভি অ্যাপগুলো আসল র্যামে সংরক্ষিত থাকে।
ভার্চুয়াল র্যাম শুধু তখনই কাজ করবে, যখন ফিজিক্যাল র্যাম সম্পূর্ণ পরিমাণে ব্যবহার হয়ে যাবে। ভার্চুয়াল র্যাম ফিচার র্যাম ব্যবহার করে মূলত বেশি অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে ধরে রাখতে সক্ষম হবে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসসমূহ।
উল্লেখ্য যে, ভার্চুয়াল র্যাম দ্বারা গেমিং পারফরম্যান্স বুস্ট পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ভার্চুয়াল র্যাম গেমিংয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো কাজে আসবেনা।
ফোনে ভার্চুয়াল র্যাম ফিচার কেনো এলো?
আমরা আগেই জেনেছি যে স্মার্টফোনের এই ভার্চুয়াল র্যাম ফিচার নতুন কোনো প্রযুক্তি নয়। কম্পিউটারে বেশ অনেক বছর ধরেই এই ফিচারটি রয়েছে।
স্মার্টফোনের হেভি অ্যাপ ও গেমসমূহের কল্যাণে অবশেষে এই ভার্চুয়াল র্যাম ফিচারটি স্মার্টফোনে এসেছে।
কয়েক বছর আগেও স্মার্টফোনে ২জিবি র্যাম যথেষ্ট ছিলো। তবে সময়ের সাথে অ্যাপসমূহের সাইজ বেড়েছে ও চলতে রিসোর্স ও বেশি লাগে।
যেহেতু হার্ডওয়্যার লিমিটেশনের কারণে অধিক র্যাম যুক্ত করা সম্ভব নয়, তাই ভার্চুয়াল র্যাম ব্যবহার করা একটি যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত। এতে স্মার্টফোন নির্মাণের খরচ একই রেখে ব্যবহারকারীদের বাড়তি মেমোরি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
যেমনঃ স্মার্টফোনে ৫জি থাকাটা এখন তেমন প্রয়োজনীয় নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে গিয়ে অবশ্যই কাজে লাগবে। ভার্চুয়াল র্যাম এর ধারণাও অনেকটা এমন। অদূর ভবিষ্যতে স্মার্টফোনে বেশ অসাধারণ একটি সংযোজন হতে পারে ভার্চুয়াল র্যাম ফিচারটি।
ক্রোম, পাবজি, বা গেনশিন ইমপ্যাক্ট এর মতো রিসোর্স হেভি অ্যাপ/গেমসমূহ ফোনে প্রচুর পরিমাণে র্যাম দখল করে। এমন পরিস্থিতে বেশ কাজে আসতে পারে এই বাড়তি র্যাম।
এছাড়াও ৮কে রেজ্যুলেশন ভিডিও রেকর্ডিং ও এআর অ্যাপসমূহ দিনদিন মেইনস্ট্রিম হয়ে যাচ্ছে। এসব অ্যাপসমূহ আসন্ন সময়ে বেশ ভালোভাবে কাজ করবে ভার্চুয়াল র্যামের কল্যাণে।
ভার্চুয়াল র্যাম সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে রুট করে মেমোরি কার্ডকে র্যাম হিসেবে ব্যবহার করে মোট র্যাম এর পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। এছাড়াও ভার্চুয়াল র্যাম ফিচারের মাধ্যমে বেশ সহজে কোনো সমস্যা ছাড়া স্মার্টফোনের র্যাম বাড়ানো যায়।
ঘনঘন র্যাম ক্লিয়ার করার লাভ ও ক্ষতি দুইদিক-ই বিদ্যমান। যেহেতু র্যাম ক্লিয়ার করলে র্যাম ফ্রি হচ্ছে, তাই এরপর যেসব অ্যাপে প্রবেশ করবেন সেগুলো দ্রুত চলবে।
আবার অ্যাপ ক্লোস করে দেওয়ায় উক্ত অ্যাপ রিস্টার্ট করতে কিছুটা সময় লাগে। তাই ক্লিয়ার করে দেওয়া অ্যাপসমূহ চালু হতে পূর্বের চেয়ে অধিক সময় লাগতে পারে।
ভার্চুয়াল র্যাম যেকোনো বাজেটের ধরনের ডিভাইসে কাজে লাগে। তবে বাজেট ডিভাইসগুলোতে যেহেতু র্যাম কম থাকে, তাই বাজেট ডিভাইসে ভার্চুয়াল র্যাম অধিক কাজে দেয়।
হ্যাঁ, স্মার্টফোন কোম্পানিসমূহ ওটিএ আপডেটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল র্যামের পরিমাণ বাড়াতে পারে। ভার্চুয়াল র্যাম একটি সফটওয়্যার ফিচার মাত্র, তাই ভার্চুয়াল র্যাম নেই এমন ফোনগুলোতেও আপডেটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল র্যাম ফিচার যুক্ত করা সম্ভব এর নির্মাতার জন্য।