Sports

ভিএআর কি? বিশ্বকাপ ফুটবলে নতুন প্ৰযুক্তি

দেখতে দেখতে চলে এলো ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮ আসর। ক্রীড়াজগতের মহোৎসব ফুটবল বিশ্বকাপে নতুন নতুন প্রযুক্তির চমক থাকবে না তা কীভাবে সম্ভব! তেমনি এক নতুন প্রযুক্তি হলো ভিএআর বা ভিডিও এসিস্টেন্ট রেফারি সিস্টেম। এর আগে বিভিন্ন লিগে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও ফিফা বিশ্বকাপে এবারই প্রথমবারের মতো ভিএআর (VAR) প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। বিশ্বকাপে এই সিস্টেম ব্যবহার করার জন্য ফিফা অফিশিয়ালি সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিন্তু কীভাবেই বা কাজ করে এই ভিএআর সিস্টেম আর এটা নিয়ে এতো মাতামাতিরই বা কী আছে? এগুলো নিয়েই আলোচনা করা হবে এই আর্টিকেলে।

ভিএআর কী?

ভিএআর হচ্ছে ফুটবল খেলায় সম্প্রতি প্রচলিত ভিডিওর সহায়তায় তৈরি রেফারি এসিস্ট্যান্ট সিস্টেম। এটি খেলার ভিডিও রিপ্লের মাধ্যমে মাঠের রেফারিকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে থাকে। সেক্ষেত্রে মাঠের বাইরে থাকা স্টুডিওতে বিশেষ একটি টিম ভিডিও রিপ্লে বিশ্লেষণ করে। ক্রিকেট খেলায় এ ধরনের প্রক্রিয়া অনেক আগে থেকে ব্যবহৃত হলেও ফুটবল খেলায় এটা একেবারেই নতুন। এ বছরই ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল এসোসিয়েশন বোর্ড ফুটবল খেলায় ভিএআর টেকনোলজি নিয়ে আইনকানুন রচনা করে এবং ফিফাও রাশিয়া বিশ্বকাপে এই টেকনোলজি ব্যবহার করবে।

কী কাজে ব্যবহার হবে ভিএআর সিস্টেম?

মূলত রেফারির নেয়া ৪ ধরনের ডিসিশনকে আরও নির্ভুল করার জন্যই এই সিস্টেম ব্যবহার হবে। এগুলো হচ্ছে-

  • ১। গোল হয়েছে কি না এবং গোল করার প্রক্রিয়ার মাঝে কোন নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে কি না।
  • ২। পেনাল্টি নিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত।
  • ৩। লাল কার্ড দেয়া নিয়ে করা সিদ্ধান্তগুলো।
  • ৪। একজনের লাল বা হলুদ কার্ড ভুল পরিচয়ে  আরেকজনকে দেয়া নিয়ে করা সিদ্ধান্তগুলো।

 

আল রিহলা কি? কাতার বিশ্বকাপ বলে থাকা চমকপ্রদ প্রযুক্তি

কীভাবে কাজ করবে ভিএআর সিস্টেম?

এ প্রক্রিয়ায় ভিডিও এসিস্টেন্ট রেফারি এবং তার এক বা একাধিক সহযোগী ভিডিও অপারেশন রুম নামক একটি কক্ষে খেলা চলাকালীন অনেকগুলো মনিটরের সামনে বসে থাকবেন। এসব মনিটরে লাইভ এবং খেলার রিপ্লে দেখা যাবে। তাকে এ কাজে রিপ্লে অপারেটররা সাহায্য করবেন।

যখনই মাঠে হেড রেফারি কোন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্থ হবেন তখন তিনি হেডসেট দিয়ে ভিএআর কে রিভিউ করার জন্য বলতে পারবেন (অথবা ক্রিকেটের মত হাত দিয়ে টিভি রিপ্লে সঙ্কেত দিতে পারবেন)। ভিডিও ফুটেজ দেখার সময় ভিএআর টিম যদি মনে করে যে হেড রেফারিকে রিভিউ রিকমেন্ড করা উচিত তাহলে তারা তা হেডসেটের মাধ্যমে জানাতে পারবেন।

ভিএআর

অফিশিয়াল সিগনাল হিসেবে রেফারিরা হাতের তর্জনি ব্যবহার করে আয়তক্ষেত্র এঁকে দেখিয়ে ভিডিও রিভিউ এর জন্য সঙ্কেত দেবেন। রিভিউ করার জন্য সাইডলাইনের বাইরে অন ফিল্ড রিভিউ স্পট নামে একটা জায়গা থাকবে যেখানে গিয়ে ভিএআর রুমের সাথে মিলে হেড রেফারি আলোচনা করতে পারবেন। তিনি চাইলে খেলা চলাকালেও হেডসেটে ভিএআর টিমের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন

দর্শকরা ফুটবল খেলায় ভিএআর অপছন্দ করছে কেনো?

এবার আসি কেনো ফুটবল খেলায় ভিএআর ব্যবহার লোকজন অপছন্দ করছে সেই প্রসঙ্গে।

প্রথমত বলে রাখা ভালো যে, কোনো বিষয় অপছন্দ করতে লোকজন অধিক ভালোবাসে যা কিন্ত সত্য। ভিএআর এর ক্ষেত্রেও অনেকটা একই বিষয় হয়েছে। আপনার পছন্দের দলের গোল ভিএআর কেটে নিলে তা আপনার গায়ে লাগবে আবার যখন না পাওয়া পেনাল্টি পেয়ে যাবেন তখন এই প্রযুক্তি আপনার পছন্দের হতে বাধ্য।

২০১৮ এর বিশ্বকাপ ফুটবলে ভিডিও এসিস্ট্যান্ট রেফারিং এর প্রচলন শুরু হয়। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি এটি মূলত মাঠে থাকা রেফারি ও টিম অফিসিয়ালকে সাহায্য করে মাঠের মধ্যে থাকা অসংখ্য ক্যামেরার সাহায্যে। যেকোনো সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে বিবেচনা করতে এই প্রযুক্তির সৃষ্টি। যেমনঃ মাঠে থাকা রেফারি কোনো গোল বা পেনাল্টি সঠিকভাবে হয়েছে কিনা তা চেক করতে পারবেন।

তবে তার মানে এই নয় যে ভিএআর প্রযুক্তি সম্পূর্ণ সঠিক। প্রথমত ক্যামেরা এংগেল সবসময় কিন্তু পারফেক্ট নয়। মাঠে থাকা ব্যতিত অনেক বিষয়ে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়, অন্তত গুটিকয়েক ক্যামেরা দ্বারা তো তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। খেলার কথা হলে তো কোনো কিছুই কখনো পারফেক্ট হতেই পারেনা।

বিশেষ করে ফুটবল বেশ দ্রুত গতির খেলা হওয়ার কারণে এতে প্রচুর পরিমাণে নিয়ম ভাংগা হয় ও রেফারিও স্বভাবতই ভুল করে থাকে। আর এসব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবে ভিএআর। অন্য ভাষায় বলতে গেলে ফুটবল ফ্যানরা আরেকটি বিষয় পেলো যেটা নিয়ে তারা খেলার আগে, পরে বা খেলা দেখার সময় তর্ক করতে পারবে।

এই বছর ভিএআর প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে যাচ্ছে। ফিফা নতুন ধরনের এক প্রযুক্তির অনুমোদন দিয়েছে যা ম্যাচে অফসাইড এর ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার করে সেমি-অটোমেটিক সিদ্ধান্ত প্রদান করবে। এটি মূলত অফসাইড সম্পর্কিত বিষয়ে ভিএআর’কে দ্রুত ও সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে। নতুন ক্যামেরা প্লেয়ারের অবস্থান ও কার্যকলাপ এর উপর নজর রাখবে খেলার সময়। এই প্রযুক্তি বর্তমানের বিচারেও বেশ উন্নত।

ফিরে আসি আসল প্রশ্নে। কেনোইবা সবাই ফুটবল খেলার ভিএআর অপছন্দ করছে? এর উত্তর বেশ সহজ, প্রথমত এটি খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে প্রশ্নবোধক সিদ্ধান্ত গ্রহণে উৎসাহিত করে। এছাড়া খেলার সময় এটি ব্যবহারে কিছুটা সময় ব্যয় হতে পারে যা অনেকের কাছে কিছুটা বিরক্তিকর লাগতে পারে।

তবে কোনো খেলোয়াড় অফিশিয়াল সিগন্যাল ব্যবহার করে রিভিও দাবি করতে পারবেন না (করলে শাস্তির ব্যবস্থা আছে)। এ বিষয়ে আরো কিছু নীতিমালা তৈরী করা হয়েছে। ভিএআর হিসেবে বর্তমান কিংবা সাবেক রেফারিরাই দায়িত্ব পালন করবেন।

ভিএআর দিয়ে নেয়া সিদ্ধান্তের ভিডিও ক্লিপ ব্যাখ্যাসহ মাঠে জায়ান্ট স্ক্রিনে এবং টিভিতে দেখানো হবে।

এই বিশ্বকাপের সকল ম্যাচের ভিএআর করা হবে রাশিয়ার মস্কো’তে অবস্থিত একটি কক্ষ থেকে। আশা করা যাচ্ছে এই টেকনোলজি ব্যবহারে খেলার ফলাফল ও বিচারকার্যে আরো স্বচ্ছতা আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: দুঃখিত!! কপি করা যাবে না, শেয়ার করুন।

Adblock Detected

Please Turn Off Your AdBlocker