ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর পার্থক্য কি?
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর পার্থক্য: বর্তমান গতিশীল বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিগুলো সকল ক্ষেত্রে উন্নতি করে চলেছে। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো নিজেরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তুললেও অনেক কোম্পানি দক্ষ কর্মীর অভাব অনুভব করে। এসব কোম্পানির কাছে লোকবল ও অন্যান্য রিসোর্স থাকেনা। অখনই প্রশ্ন উঠে আউটসোর্সিং কি এটার সমাধান হতে পারে?
উল্লিখিত অবস্থায় ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর মত ব্যাপারগুলো কাজে আসে। দুই ক্ষেত্রেই কোনো কোম্পানির প্রয়োজনীয় লোকবল বাইরে থেকে ভাড়া করা হয় খরচ কম রেখে হাই কোয়ালিটি রেজাল্ট পেতে।
বেশিরভাগ সময় “ফ্রিল্যান্সিং” ও “আউটসোর্সিং” শব্দ দুইটি একই কাজে ব্যবহার করা হলেও মূলত এই দুইটি শব্দের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। অর্থের দিক দিয়ে এই দুইটি ব্যাপার বিপরীতধর্মী হলেও মূলত দুটি বিষয় একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
অনেকেই মনে করেন আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং একে অন্যের সমার্থক শব্দ। চলুন জেনে নেওয়া যাক আউটসোর্সিং কি, ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর পার্থক্য, ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত।
আউটসোর্সিং কি?
কোনো সেবা প্রদানে কিংবা পণ্য তৈরিতে কোম্পানির বাইরের কাউকে নিযুক্ত করার বিষয়কে আউটসোর্সিং বলা হয়। অর্থাৎ কোনো কাজ সম্পাদনে কোনো কোম্পানির প্রয়োজনীয় লোকবল বা দক্ষতা না থাকলে সেক্ষেত্রে কোম্পানির কর্মচারী নয়, এমন কাউকে শুধুমাত্র উক্ত কাজ সম্পাদনে ভাড়া করার ব্যাপারকে বলা হয় আউটসোর্সিং।
১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম আউটসোর্সিংকে বিজনেস স্ট্রেটেজি হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হয়। ১৯৯০ এর দশকে এই ধারণাটি ব্যবসায়িক অর্থনীতির একটি প্রধান উপাদানে পরিণত হয়। তবে অনেক দেশেই আউটসোর্সিংকে ভালো চোখে দেখা হয় না।
যারা আউটসোর্সিং এর বিপক্ষে তর্ক করেন তাদের যুক্তি এই যে আউটসোর্সিং এর ফলে স্থানীয় চাকরিসমুহ, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে, দিনদিন কমে যাচ্ছে। আবার যারা আউটসোর্সিং এর পক্ষে তাদের মতে এর ফলে একটা মুক্ত বাজার অর্থনীতি গড়ে উঠেছে, যার থেকে কোম্পানিসমুহ প্রয়োজনীয় খাতে সহজেই রিসোর্স খাটাতে পারে।
একটি প্রতিষ্ঠান তখনই বাইরের কাউকে আউটসোর্সিং এর জন্য নিয়োগ করে যখন ওই কাজ স্থায়ী নয় ও কাজ শেষে প্রতিষ্ঠানে উক্ত কর্মীকে তালিকাভুক্ত কর্মী করার দরকার পড়েনা। মূলত খরচ কমাতেই প্রতিষ্ঠানগুলো আউটসোর্সিং করে কর্মী ভাড়া করে থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর পার্থক্য কি?
আউটসোর্সিং কি তা সম্পর্কে ইতিমধ্যে আপনার যথেষ্ট ধারণা হয়ে গিয়েছে নিশ্চয়। এবার জানি চলুন ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এর পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত।
তত্ত্ব
‘Freelancing’ শব্দটি এসেছে ‘free’ ও ‘lance’ শব্দ দুইটি থেকে। প্রচলিতভাবে ‘freelancing’ এর অর্থ হলে মুক্তপেশা বা স্বাধীনভাবে কাজ করা।
অন্যদিকে ‘out’ ও ‘source’ এই শব্দ দুইটির সমন্বয়ে তৈরী ‘outsourcing’ শব্দটি। অর্থাৎ ‘outsourcing’ এর অর্থ দাঁড়ায় বাইরের কোনো উৎস থেকে কাজ করিয়ে আনা।
সংজ্ঞা
ফ্রিল্যান্সিং অর্থ ধরাবাঁধা নিয়ম ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করা। অন্যদিকে আউটসোর্সিং দ্বারা চাকরি দেওয়া ছাড়াই ফ্রিল্যান্সার ভাড়া করে অর্থের বিনিময়ে কাজ করানোকে বুঝায়।
সম্পর্ক
ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন ও কাজের শেষে বাইরের সোর্স থেকে তার পেমেন্ট পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে একজন আউটসোর্স ক্ল্যায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারকে কাজ ও কাজের শেষে পেমেন্ট করে থাকেন।
কার্যক্রম
একজন ফ্রিল্যান্সার স্বাধীন কর্মী হিসেবে কাজ করেন। একজন ফ্রিল্যান্সার কোনো কাজ সময়ের বাধা ধরা নিয়মে করতে বাধ্যগত নন। ডেডলাইনের মধ্যে কাজ জমা দিতে পারলে তিনি যখনই ইচ্ছা কাজ করতে পারেন। কাজ শেষে তিনি তার সম্মানী পান। আবার কাজ না করলে সেক্ষেত্রে কোনো অর্থ পাবেন না ফ্রিল্যান্সার।
অন্যদিকে একজন আউটসোর্স ক্লায়েন্ট তার প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় লোকবল বাইরে থেকে ভাড়া করেন প্রতিষ্ঠানে উক্ত কর্মীকে স্থায়ী চাকরী প্রদান ছাড়াই। আউটসোর্সক্লায়েন্ট হতে পারেন কোনো প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সার এর মধ্যের সেতু। এমন অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রয়োজনে অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ফ্রিল্যান্সার সরবরাহ করে থাকে।
পেমেন্ট
একজন ফ্রিল্যান্সার তার কাজের বিনিময়ে পেমেন্ট পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ কাজের আগে যত অর্থের বিনিময়ে কাজটি নিয়েছেন, ঠিক ততোটাই অর্থ পেমেন্ট হিসাবে পাবেন। একজন ফ্রিল্যান্সার কোনো ধরনের মাসিক বেতন পান না। অন্যদিকে একইভাবে একজন আউটসোর্সক্লায়েন্ট কাজের বিনিময়ে ফ্রিল্যান্সারকে পেমেন্ট দিয়ে থাকেন। এর ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারকে কোনো ধরনের নিয়মিত বেতন দেন না আউটসোর্সক্লায়েন্ট।
উদাহরণ
ধরুন মিঃ আকাশ একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার, যিনি মূলত লোগো ডিজাইনে পারদর্শী। এখন তাকে এমন একটি কাজের প্রস্তাব দেওয়া হলো যেখানে কোনো এক প্রতিষ্ঠানের জন্য লোগো বানাতে হবে, যার বিনিময়ে তিনি ৫০ডলার পাবেন। এখন তিনি চাইলে কাজটি করতে পারেন ও উক্ত অর্থ পেতে পারেন। এটিই হলো ফ্রিল্যান্সিং।
আবার ধরুন একটি প্রতিষ্ঠানের নতুন লোগো প্রয়োজন হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র লোগো ডিজাইনের জন্য আলাদা একজন কর্মীকে চাকরি দেওয়া তাদের জন্য ব্যয়বহুল হবে। তাই বাইরে থেকে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে দক্ষ কোনো ফ্রিল্যান্সার এর মাধ্যমে লোগো ডিজাইন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উক্ত প্রতিষ্ঠান। এখানে উক্ত প্রতিষ্ঠান বাইরে থেকে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগের ব্যাপারটিকে বলা হয় আউটসোর্সিং।
সুবিধা
ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধাসমূহ হলোঃ
- আপনি কোনো কাজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে বাধ্যগত নন।
- চাকরির মত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা কিংবা সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে এমন কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে। একজন ফ্রিল্যান্সার তার যখন ইচ্ছা কাজ করতে পারেন।
- একজন ফ্রিল্যান্সার এর কোনো বস থাকেনা, তিনি নিজেই নিজের বস।
- ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে নিজের শিডিউলের সিদ্ধান্ত ফ্রিল্যান্সারের নিজের।
আউটসোর্সিং এর সুবিধাসমূহ কি?
- কম অর্থ ও রিসোর্স ব্যয় করে প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদন করা যায়।
- আউটসোর্সিং এর জন্য নিয়োগ করা ফ্রিল্যান্সারের জন্য কোনো বড় দায়িত্ব নিতে হয়না বা ফ্রিল্যান্সারকে কোনো ধরনের অফিস স্পেস দিতে হয়না।
অসুবিধা
ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধাসমূহ হলোঃ
- কাজের জন্য পেমেন্ট পাওয়া বা পেমেন্ট পাওয়া মত কাজ করা, এই বিষয়গুলো নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সংশয় থেকেই যায়।
- ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে সবসময় কাজ পাওয়া যায়না। এছাড়াও আপনি যে ধরনের কাজ করতে পছন্দ করেন, সে ধরনের কাজ না ও পেতে পারেন।
- ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই। হয়ত এক মাসে আপনি ১লক্ষ টাকা আয় করলেন, আবার দেখা গেলো পরবর্তী মাসে ১০হাজার টাকাই আয় করতে পারলেন না। মূলত আপনি যতটুক কাজ পাবেন ও করবেন, আপনার আয় ও ঠিক ততটুকু হবে।
আউটসোর্সিং এর অসুবিধাসমূহ কি?
- আপনার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন হওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। একজন ফ্রিল্যান্সার উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে কোনো কাজ প্রত্যাখ্যান করে দিতে পারেন।
- আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে প্রতিবার কাজের মান আপনার আশানুরূপ না ও হতে পারে।
- কোনো কাজ সম্পাদনে সাধারণ উপায়ের চেয়ে আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে অধিক সময় লাগতে পারে।
অর্থাৎ আউটসোর্সিং এর জন্য নিয়োগ করা কর্মী হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সার। আবার তিনি যে কাজ পেয়ে থাকেন তা মূলত কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ যা তাকে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রদান করা হয়।