সারা রাত ফোনে চার্জ দেওয়া কি ঠিক? ফোনে কতটুকু চার্জ দেবেন?
মোবাইল ফোন এখন অনেক মানুষের নিত্যসঙ্গী। এই সঙ্গীর দীর্ঘায়ুর জন্য এর ব্যাটারির দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। কিন্তু অনেকেই স্মার্টফোনে কীভাবে চার্জ দিতে হবে, সে নিয়মটাই ঠিকঠাক মানেন না। অনেকেই রাতভর ফোন চার্জার যুক্ত করে ফেলে রাখেন।
এ কারণে স্মার্টফোনে বেশি দিন চার্জ ধরে রাখতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব স্মার্টফোন ব্যাটারির নির্দিষ্ট জীবনকাল আছে। কিন্তু রাতভর স্মার্টফোন চার্জে দিয়ে রাখলে ফোনের ব্যাটারির আয়ু কমতে থাকে।
অবশ্য, অ্যাপল, স্যামসাং ও এলজির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করে, তাদের ফোন সারা রাত চার্জে রাখলেও তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। গুগলের পক্ষ থেকেও বলা হয়, অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে এমন সিস্টেম আছে, যা ফোনকে অতিরিক্ত চার্জের হাত থেকে সুরক্ষা দিতে পারে।
তবে ব্যাটারি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্মার্টফোনের ব্যাটারি কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য শতভাগ চার্জে থাকার উপযোগী নয়। যাঁরা প্রায়ই সারা রাত ফোন চার্জে রাখেন বা শতভাগ চার্জ সম্পন্ন হওয়ার পরেও তা চার্জার থেকে খোলেন না, তাঁরা লিথিয়াম আয়ন স্মার্টফোন ব্যাটারির বয়স বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলেন।
জার্মান ব্যাটারি প্রযুক্তি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ব্যাটারি ইঞ্জিনিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডমিনিক শুলঠে বলেন, যদি ফোনে শতভাগ চার্জ দেন এবং দীর্ঘক্ষণ শতভাগ চার্জ ধরে রাখেন, তা ব্যাটারির আয়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির বয়স বাড়লে এর ভেতরের যে রসায়ন, তা পরিবর্তন হয়ে যায় এবং তা চার্জ ধরে রাখার ও স্মার্টফোনকে শক্তি জোগানোর কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, সব লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির বয়স বাড়ে এবং জীবনকাল নির্দিষ্ট। যা–ই করুণ না কেন, আপনার ব্যাটারির সক্ষমতা ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকবে।
কিন্তু কত দ্রুত এ কর্মক্ষমতা কমবে, তা কিন্তু ঠিক করতে পারেন আপনি। অধিকাংশ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবশ্য এ নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই।
এ বিষয়ে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ বলছে, সারা রাত চার্জ দেওয়া নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগের কিছু নেই। গুগল বলছে, ফোনে অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়টি পুরোনো ধ্যানধারণা।
গুগলের পণ্য ব্যবস্থাপক রোনাল্ড হো বলেন, ‘অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া খারাপ’ বা ‘ঘন ঘন চার্জ দেওয়া খারাপ’ বলে যে মানসিকতা আছে, তা পুরোনো দিনের ধারণা।
এখনকার প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাটারি ও চার্জিং অপ্টিমাইজিং প্রযুক্তি তাদের ডিভাইসে ব্যবহার করছে। ফোনের ব্যাটারির চার্জ যখন শতভাগ হয়, তখন অভ্যন্তরীণ ব্যাটারি চার্জার অতিরিক্ত চার্জ হওয়া ঠেকিয়ে দেয়। ফোনের ব্যাটারিগুলো চার্জারের কাছ থেকে শতভাগ চার্জ হওয়ার আগেই বার্তা পেয়ে তাকে।
তবে শুলঠেসহ অধিকাংশ স্মার্টফোন নির্মাতা একটি বিষয়ে একমত যে আপনি যখন কোনো স্মার্টফোন ব্যবহার না করে সংরক্ষণের জন্য রাখেন, তখন একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত চার্জ রাখা উচিত। এটা থেকেই বোঝা যায়, স্মার্টফোনের ব্যাটারি শতভাগ চার্জ রাখতে পছন্দ করে না।
শুলঠে বলেন, স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ থাকলে তার আয়ু থাকে বেশি দিন। তাই স্মার্টফোনের চার্জ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে এ সীমার মধ্যে চার্জ রাখার জন্য বলে অধিকাংশ স্মার্টফোন নির্মাতা।
স্মার্টফোন নির্মাতা স্যামসাং তাদের ব্যাটারি ওয়েব পেজে বলেছে, আপনার ব্যাটারিতে চার্জ কমপক্ষে ৫০ শতাংশ রাখুন।
অ্যাপল বলেছে, দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য আইফোনের চার্জ অর্ধেক রাখুন। এতে ব্যাটারি আয়ু বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মার্টফোন নির্মাতাদের পরামর্শ শুনলে কোনো ফোনই শতভাগ চার্জে দীর্ঘক্ষণ রাখা ঠিক নয়। সারারত মোবাইলে চার্জ না দিয়ে সকালে বা অন্য কোনো সময়ে চার্জ দেওয়া ভালো। রাতে দীর্ঘক্ষণ চার্জ দিয়ে রাখলে ফোন দীর্ঘদিন ভালো রাখা যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব স্মার্টফোন ব্যাটারির নির্দিষ্ট জীবনকাল আছে। কিন্তু রাতভর স্মার্টফোন চার্জে দিয়ে রাখলে ফোনের ব্যাটারির আয়ু কমতে থাকে।
অনেকেই রাতে ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সারা রাত চার্জ হয় ফোন। কিন্তু আপনি জানেন কি? আপনার অজান্তেই ফোনের আয়ু কমে যাচ্ছে। এখনই সাবধান হন।
একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সারা দিনের ব্যস্ততার পর মোবাইলের চার্জ যখন প্রায় শেষ, তখন তা চার্জে দিয়ে ঘুমোতে যান অনেকেই। কিন্তু এর ফলে ব্যাটারি ওভার চার্জড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
লিথিয়াম ব্যাটারির ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা আরও বেশি। ফোন অতিরিক্ত চার্জ হয়ে গিয়ে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ‘লিথিয়াম আয়ন’ ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে।
অন্যদিকে চার্জ বেশি হলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা মোবাইলে কভার ব্যবহার করি। এর ফলে তাপ সহজে বের হয় না। এই তাপ ব্যাটারির সেল অক্সিডেশান তৈরি করতে পারে, যা ব্যাটারির ক্ষমতা এবং আয়ু আরও কমিয়ে দেয়।
স্মার্টফোনের চার্জ নিয়ে অনেক সময়েই সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। সারা দিনের কাজের শেষে রাতে যখন চার্জ প্রায় নিঃশেষ, তখন সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখাই সুবিধের মনে করি আমরা। কিন্তু জানেন কি, এভাবে মোবাইল ফোনের আয়ু কমিয়ে ফেলছি আমরাই।
কিছু মোবাইলে স্মার্ট ফাস্ট চার্জিং এর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু তার সংখ্যা গোনার পক্ষেও নগণ্য।
রাতে ফোন চার্জে রেখে ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাসটা ব্যাটারির স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই সুবিধাজনক নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। ০-১০০% চার্জ হওয়াকে একটি সাইকেল ধরা হয়। একাধিক বিশেষজ্ঞের দাবি, কমবেশি ৪০০-৫০০ সাইকেল পূর্ণ করে ফেলার পর ব্যাটারির জীবনকাল শুরু করে।
তখন তা আর কতদিন চলবে সেটা নির্ভর করে পরবর্তীকালে আপনার ব্যবহারের এবং চার্জের ধরনের উপর। সে ক্ষেত্রে সারা রাত তাকে চার্জে বসিয়ে ব্যস্ত রাখা মোটেও জুতের কাজ হচ্ছে না।
কারণ ব্যাটারি প্রযুক্তিবিদদের মতে, রোজ ৮০% এর বেশি চার্জ করা (সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখা) এবং ২০% নিচে নামার পরেও ফের চার্জ না করে কাজ চালিয়ে যাওয়া, মোবাইলের রিচার্জেবল ব্যাটারির আয়ু সব থেকে তাড়াতাড়ি কমায়। সে ক্ষেত্রে, সারা দিনের সঙ্গী স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই তাকে সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখা মোটেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়।
কিছু মোবাইলে ‘ট্রিকল চার্জ’ প্রযুক্তির ব্যবস্থা থাকে। যার ফলে সেইসব হ্যান্ডসেট সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখলেও কিছু ক্ষতি হয় না। কিন্তু সেইসব প্রিমিয়াম ফিচারের মোবাইল আর কটা।
৯৮-৯৯% মোবাইল সারা রাত চার্জে বসিয়ে রাখলে, ১০০% চার্জ হওয়ার পর তা কমে ৯৯% হওয়া এবং চার্জ হওয়া একই সঙ্গে চলতে থাকায় যে তাপ উৎপন্ন হয়, তা কিন্তু ব্যাটারির আয়ু কমাতেই থাকে ক্রমাগত।
মোবাইলে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন পলিমার ব্যাটারি লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইড লেয়ার এবং গ্রাফাইট লেয়ারের একাধিক স্তর দিয়ে তৈরি। লিথিয়াম আয়নগুলি গ্রাফাইট থেকে লিথিয়াম কোবাল্ট অক্সাইডের স্তরের দিকে সরে যায় শক্তি ছাড়তে।
চার্জে বসিয়ে রাখলে কোবাল্ট অক্সাইড স্তর থেকে ধীরে ধীরে তা ফেরে গ্রাফাইট স্তরে। দীর্ঘক্ষণ (সারা রাতের মতো) এ ভাবে চললে গ্রাফাইট স্তরে আয়নের ঘনত্ব প্রয়োজনের তুলনায় বেড়ে গিয়ে স্তরের অখণ্ডতা নষ্ট করে দিয়ে আয়ু কমিয়ে দেয়।
তবে স্মার্ট ফাস্ট চার্জার হোক বা যা হাতের কাছে রয়েছে, যখন খেয়াল রাখতে পারবেন, তখনই লাগিয়ে দিন চার্জে। শুধু একটু খেয়াল রাখুন, ৮০% পেরিয়ে গেলে খুলে রাখাই ভালো। আর যখন ২০-র কাছাকাছি নেমে আসবে দাগ, মনে রাখবেন তখন ফের চার্জ দেওয়ার সময় এসে গিয়েছে।
স্মার্টফোনে আমরা বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করে থাকি। কিছু অ্যাপস রয়েছে যা ফোনের ব্যাটারি দ্রুত খরচ হয় বা ফোন গরম হয়ে ওঠে। তাই এ ধরনের অ্যাপস ব্যবহার না করাই ভালো।