ইউটিউব কপিরাইট স্ট্রাইক কি? কিভাবে নিরাপদে থাকা যায়?
ইউটিউব কমিউনিটির মধ্যে কপিরাইট স্ট্রাইক একটি বহুল আলোচিত বিষয়। ছোটো ভ্লগিং চ্যানেল হোক কিংবা বহুল পরিচিত কোনো গেম স্ট্রিমার- উপযুক্ত কারণ পেলে যেকারো চ্যানেলেই কপিরাইট স্ট্রাইক দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ইউটিউব কতৃপক্ষ।
কপিরাইট মূলত একট আইনি বিষয় যা কারো অরিজিনাল কাজের স্বত্বাধিকার রক্ষা করে। আর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এই আইনকে মেনে চলে ইউটিউব। যার ফলে সকল ইউটিউব ব্যবহারকারীর জন্য এই নিয়মগুলো প্রযোজ্য।
ইউটিউব এর নিয়ম ভঙ্গ করে অন্যকারো ভিডিও বা কনটেন্ট কিংবা অনুপযুক্ত কিছু শেয়ার করলে চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক আসতে পারে। ইউটিউব কপিরাইট স্ট্রাইক একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়, তাই ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এই ব্যাপারে বিষদভাবে জানা একান্ত জরুরি।
এই পোস্ট সম্পূর্ণভাবে পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেনঃ
- কপিরাইট স্ট্রাইক কি
- চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক আসলে কি হয়
- কপিরাইট ক্লেইম ও স্ট্রাইক এর পার্থক্য
- কিভাবে কপিরাইট স্ট্রাইক থেকে চ্যানেলকে নিরাপদ রাখবেন
কপিরাইট স্ট্রাইক কি? What is YouTube Copyright Strike?
বর্তমানে ইউটিউব চ্যানেল খোলা খুবই সহজ একটি ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে অন্যের ভিডিও আপলোড করে এখান থেকে পার পাওয়া সহজ নয়! আবার কপিরাইট স্ট্রাইক কিন্তু স্বয়ংক্রিয় কোনো বিষয়ও নয়। কোনো কনটেন্টের মালিক তার কনটেন্ট অন্য কেউ অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করায় উক্ত চ্যানেলকে কপিরাউট স্ট্রাইক প্রদান করতে পারেন। কনটেন্টের মালিকের কপিরাইট স্ট্রাইক এর আবেদন গৃহীত হলে কপিরাইট ম্যাটেরিয়ালযুক্ত উক্ত ভিডিও টেকডাউন বা সরিয়ে নিবে ইউটিউব কতৃপক্ষ।
ইউটিউব যেহেতু কপিরাইট আইন মেনে চলে, সে হিসাবে তারা আইনিভাবে কপিরাইট স্ট্রাইক এর আবেদন গ্রহণপূর্বক পদক্ষেপ নেয়। একটি ভিডিওতে সর্বোচ্চ একটি স্ট্রাইক দেওয়া যায়। তবে কপিরাইট স্ট্রাইক ব্যাতীত একাধিক কারণে ইউটিউব থেকে ভিডিও মুছে দিতে পারে ইউটিউব কতৃপক্ষ।
চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক এলে কি হয়?
অযাচিতভাবে অন্যের কনটেন্ট ব্যবহার করার ফলে প্রযুক্ত শাস্তি ও ওয়ার্নিং হিসেবে দেখা যায় কপিরাইট স্ট্রাইককে। কোনো চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক দেওয়া হলে উক্ত চ্যানেলের মালিককে ইউটিউবের “কপিরাইট স্কুলে” প্রদত্ত পাঠ গ্রহণ করতে বলা হয়। এর ফলে ক্রিয়েটরগণ ইউটিউবে কিভাবে কপিরাইট আইন কাজ করে তা জানতে পারেন। সেই সাথে তাদের ভিডিওতে স্ট্রাইক আসার কারণ সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে পারেন।
কোনো চ্যানেলে একটিভ কপিরাইট স্ট্রাইক থাকলে উক্ত ইউটিউব চ্যানেল থেকে এডসেন্স এর মাধ্যমে আয় করার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ স্ট্রাইক থাকলে চ্যানেল মনিটাইজেশনে সমস্যা হয়। কপিরাইট স্ট্রাইক এর কারণে লাইভস্ট্রিম রিমুভ করা হলে সেক্ষেত্রে ৯০দিন লাইভস্ট্রিম ফিচার ব্যবহার করা যাবেনা উক্ত কপিরাইট স্ট্রাইক থাকা চ্যানেলে।
ইউটিউব চ্যানেলে ৩টি কপিরাইট স্ট্রাইক এলে কি হয়?
ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম স্ট্রাইক অনেকটা ওয়ার্নিং ও শেখার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে পরপর তিনবার ইউটিউব চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক আসলে চরম ক্ষতি হবে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলের। কোনো ইউটিউব চ্যানেলে তিনবার কপিরাইট স্ট্রাইক আসলে সেটি টার্মিনেট করা হবে, অর্থাৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর ফলে উক্ত গুগল একাউন্টের সাথে যুক্ত অন্যান্য ইউটিউব চ্যানেলসমুহও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
অর্থাৎ কোনো চ্যানেলে তিনবার কপিরাইট স্ট্রাইক আসলে উক্ত একাউন্টে যুক্ত থাকা চ্যানেলের ভিডিও রিমুভ করা হবে। চ্যানেলের মালিক কোনো নতুন চ্যানেল তৈরিতে করতে পারবেন না। অর্থাৎ পরপর তিনবার কপিরাইট স্ট্রাইক আসলেঃ
- উক্ত অ্যাকাউন্টে থাকা ইউটিউব সার্ভিস ও চ্যানেল টার্মিনেট বা বন্ধ করা হবে
- উক্ত একাউন্টের মাধ্যমে আপলোডকৃত সকল ভিডিও রিমুভ করা হবে
- উক্ত অ্যাকাউন্ট হতে নতুন ইউটিউব চ্যানেল তৈরী করা যাবেনা
👉 ইউটিউব থেকে আয় করার অনেকগুলো উপায় জানুন
কপিরাইট স্ট্রাইক দূর করার নিয়ম
কপিরাইট স্ট্রাইক দূর করার তিনটি উপায় রয়েছে। নিচে কপিরাইট স্ট্রাইক দূর করার উপায়সমুহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
স্ট্রাইক এক্সপায়ার হওয়ার অপেক্ষা করুন
কপিরাইট স্ট্রাইক ৯০দিন পর এক্সপায়ার বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। তাই চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক আসলে সাবধানে কনটেন্ট আপলোড করলে ৯০দিন পর স্ট্রাইক চলে যাবে। প্রথমবারের মত কপিরাইট স্ট্রাইক আসলে ইউটিউব কপিরাইট স্কুল এর পাঠ সম্পন্ন করা অত্যাবশকীয়।
নেটওয়ার্কিং করে স্ট্রাইক দূর করা
আগেই জেনেছি যে কপিরাইট স্ট্রাইক ইউটিউব নয়, বরং কনটেন্টের স্বত্বাধিকারী প্রদান করে। কপিরাইট স্ট্রাইক আসলে উক্ত তথ্য থেকে কপিরাইট স্বত্বাধিকারীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে কপিরাইট স্ট্রাইক তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানাতে পারেন।
কাউন্টার নোটিফিকেশন সাবমিট করা
যদি কোনো অযোগ্য বা ভিত্তিহীন কারণে কপিরাইট স্ট্রাইকের মাধ্যমে চ্যানেলের ভিডিও রিমুভ করা হয়, সেক্ষেত্রে কাউন্টার নোটিফিকেশন সাবমিট করার সুযোগ পাবেন ইউটিউব ক্রিয়েটরগণ। উক্ত কাউন্টার নোটিফিকেশন সাবমিশন যদি যুক্তিযুক্ত হয়, তবে কপিরাইট স্ট্রাইক তুলে নেওয়া হবে।
কপিরাইট স্ট্রাইক চেক করার নিয়ম
ইউটিউব চ্যানেলের কপিরাইট স্ট্রাইক চেক করতেঃ
- ইউটিউব স্টুডিওতে প্রবেশ করুন
- বামপাশে থাকা মেন্যু থেকে Content সিলেক্ট করুন
- ফিল্টার আইকনে ক্লিক করর Copyright Claims সিলেক্ট করুন
- যদি উক্ত চ্যানেলে কোনো কপিরাইট স্ট্রাইক থাকে তাহলে “Copyright claim” এর উপর মাউস পয়েন্টার রেখে SEE DEATILS এ ক্লিক করে বিস্তারিত জানতে পারবেন
👉 ফেসবুক ভিডিও থেকে আয় করার উপায়
কপিরাইট ক্লেইম ও স্ট্রাইক এর পার্থক্য
অনেকে কপিরাইট ক্লেইম ও কপিরাট স্ট্রাইক – দুইটি বিষয়কে একই ভেবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। অন্যের কনটেন্ট ব্যবহারজনিত বিষয় হলেও উভয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। চলুন দুইটি বিষয়ের বৈশিষ্ট্য জানার মাধ্যমে দুইটির পার্থক্য বুঝি।
কপিরাটকে ক্লেইম (Copyright Claim) কে কনটেন্ট আইডি ক্লেইম (Content ID Claim) ও বলা হয়। কনটেন্ট আইডি একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল ব্যবস্থা। কোনো ভিডিও আপলোডের পর উক্ত ভিডিওতে অন্যের যেসব কপিরাইট ম্যাটেরিয়াল, যেমনঃ ভিডিও ক্লিপস, ছবি বা অডিও, ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় তা উক্ত স্বত্বাধিকারীকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কপিরাট ক্লেইম সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা জরুরিঃ
- কপিরাইট ক্লেইম এর ক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেলের কোনো মারাত্নক ক্ষতি হয়না
- অন্য কারো কপিরাইট কনটেন্ট ব্যবহার করে থাকলে উক্ত কনটেন্টের মালিক ভিডিও থেকে রেভিনিউ নিতে পারবে
- কপিরাইট হোল্ডার চাইলে রেভিনিউ অর্জন করতে উক্ত ভিডিওতে এড দেখাতে পারে
- কপিরাইট কনটেন্ট এর মালিক কিছু দেশ বা অঞ্চলে ভিডিও রেস্ট্রিক্ট করার ক্ষমতা রাখেন
- কপিরাইট হোল্ডার চাইলে কোনো অ্যাকশন না নিতেও পারেন
- কপিরাইট শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভিডিওকে প্রভাবিত করে
অন্যদিকে কপিরাইট স্ট্রাইক একটা ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। অন্য কারো কনটেন্ট ব্যবহার করে থাকলে উক্ত কনটেন্টের কপিরাইট হোল্ডার ঐ ভিডিও ডাউন করে দেওয়ার পাশাপাশি কপিরাইট স্ট্রাইক প্রদান করতে পারে। কপিরাইট স্ট্রাইম সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা প্রয়োজনঃ
- কপিরাইট স্ট্রাইক সরাসরি চ্যানেলকে প্রভাবিত করে
- কপিরাইট হোল্ডার উক্ত ভিডিও ইউটিউব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে দিতে পারে
- কোনো চ্যানেলে কপিরাইট স্ট্রাইক আসলে মনেটাইজেশন পাওয়া যায়না
- পরপর তিনটি স্ট্রাইক আসলে চ্যানেল টার্মিনেট করা হয়
- একটি কপিরাইট স্ট্রাইক ৩মাস পর এক্সপায়ার হয়ে যায়।
ফেয়ার ইউজ কি
ফেয়ার ইউজ (Fair Use) বলতে কপিরাইট ম্যাটেরিয়াল শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে যথাযথ ব্যবহারকে বুঝায়। অর্থাৎ এই নিয়মে অন্যের কপিরাইট কনটেন্ট ব্যবহার করলে উক্ত স্বত্বাধিকারী স্ট্রাইক দিতে পারবে না। তিনটি ক্ষেত্রে ফেয়ার ইউজ প্রযোজ্যঃ
- সমালোচনাঃ কোনো মুভি বা গানের সমালোচনার খাতিরে উক্ত গান বা মুভির অংশবিশেষ (যা কপিরাইট ম্যাটেরিয়াল) ভিডিওতে ব্যবহার করা যাবে
- প্যারোডিঃ শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে অন্যের কনটেন্ট ব্যাঙ্গ করার প্রয়োজনে কপিরাইট ম্যাটেরিয়াল এর অংশবিশেষ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই
- টিউটোরিয়ালঃ শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে কোনো কপিরাইট ম্যাটেরিয়ালের অংশবিশেষ ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।
এছাড়াও ক্রিয়েটিভভাবে তৈরি ম্যাশাপ ও নিউজ এর ক্ষেত্রে ফেয়ার ইউজ প্রযোজ্য হতে পারে। ইউটিউব ভিডিওতে অন্যের কনটেন্ট ফেয়ার ইউজ সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।
কপিরাইট স্ট্রাইক থেকে নিরাপদ থাকার উপায়
প্রতিবার ইউটিউব চ্যানেলে কনটেন্ট আপলোড এর আগে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মনে চললে কপিরাইট স্ট্রাইক থেকে নিরাপদে থাকা যায়। কোনো চ্যানেলে কপিরাইট আসা থেকে বাচঁতেঃ
- ভিডিও তৈরির সময় অরিজিনাল বা কপিরাইট ফ্রি ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করুন।
- একান্তই অন্য কোনো কপিরাইট কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট হোল্ডারের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি আগেই সুরাহা করে নিন।
- যদিওবা ফেয়ার ইউজ এর ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্রিয়েটরের কনটেন্ট ব্যবহার করা যায়, তবুও এটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অন্যের কপিরাইট কনটেন্ট আপনার ভিডিওতে ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
- কোনো ভিডিওতে কপিরাইট ক্লেইম আসলে এই ক্লেইম স্ট্রাইকে পরিণত হওয়ার আগে কপিরাইট ম্যাটেরিয়াল সরিয়ে নিন।